নীলফামারী এক্সপ্রেস নামের আন্তঃনগর ট্রেনটি আগামী ৪ জুন থেকে চলবে। নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে রাজধানী ঢাকার পথে ছুটবে সেদিন সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রেলওয়ের সূত্রমতে, চিলাহাটি-ঢাকা পথে দিবাকালীন চলাচল করবে নতুন ওই ট্রেন।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা জানানো হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়কে।নীলফামারীর চিলাহাটি-ঢাকার পথে দিবাকালীন নতুন ওই ট্রেন চালুর খবরে আনন্দিত জেলাবাসী। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ট্রেনটির নীলফামারী এক্সপ্রেস নামকরণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
তবে এ জেলার ২১ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দের দাবিও উঠেছে এসব মাধ্যমে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতিমধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৪ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চিলাহাটি থেকে ঢাকা পথে ছড়বে ট্রেনটি।
সপ্তাহের শনিবার বাদে ছয় দিন নিয়মিত চলাচল করবে। ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশে চলবে দিনে এবং ঢাকা থেকে চিলাহাটির উদ্দেশে চলবে রাতে। সকাল ৬টায় চিলাহাটি স্টেশন ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে বিকাল তিনটা ১০ মিনিটে। অপরদিকে, বিকাল সোয়া ৪টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে চিলাহাটি পৌঁছবে রাত পৌনে ২টায়। চিলাহাটির পর ট্রেনটির যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়েছে ডোমার, নীলফামারী, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, ইশ্বরদী বাইপাস ও বিমানবন্দর স্টেশন।
চীন থেকে আমদানি করা ১১টি কোচের ওই ট্রেনের আসন সংখ্যা সাড়ে সাত শতাধিক।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল লেরওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন ট্রেনটি ট্রায়ালও শেষ করে প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’
উল্লেখ্য, জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর জেলার সৈয়দপুর থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত চলাচল শুরু হয় নীলসাগর এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের। সৈয়দপুর থেকে রাতে এবং ঢাকা থেকে দিনে চলাচল করছে ওই ট্রেনটি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত রেললাইনের উন্নয়ন শেষে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সেটি চিলাহাটি থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত চলাচল শুরু করে। ওই ট্রেন চালুর ফলে নীলফামারী জেলাসহ উত্তর জনপদের রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর জেলার (আংশিক এলাকা) মানুষের আর্থসামাজিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়। এ সময়ে দাবি ওঠে পথটিতে আরেকটি ঢাকামুখী ট্রেন চালুর। বর্তমান সরকারের সময়ে রেলের ব্যাপক উন্নয়নে পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন রুটে একাধিক নতুন নতুর ট্রেন চালু হলেও উপেক্ষিত ছিল নীলফামারী জেলাবাসীর দাবিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাবাসীর দাবিটি অনুধাবন করায় তাকে ধন্যবাদ জানান বিভিন্ন মহল থেকে।
নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক এবং নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, ‘এ জেলা থেকে নতুন আরেকটি ট্রেন চালুর সিদ্ধান্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘদিন পরে হলেও জেলার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘এ জেলা থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন ছিল নীলসাগর এক্সপ্রেস। অনেক আন্দোলনের ফসলে ট্রেনটি চালু হলেও আসন সংখ্যার অপ্রতুলতায় সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ জেলা। নতুন এ ট্রেনটিতে পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ দেওয়া না হলে আবারও বঞ্চিত হবো আমরা।’
পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটির ২৩টি এসি বার্থ আসনের মধ্যে জেলা শহরের স্টেশন বরাদ্দ মাত্র দুটি। অন্যান্য আসনও ছিল অপ্রতুল। এটি নীলফামারী জেলার একমাত্র ট্রেন হলেও পার্বতীপুর, বিরামপুর, ফুলবাড়ি, জয়পুরহাট, সান্তাহার, আহসানগঞ্জ, নাটোর স্টেশনে পর্যপ্ত আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এসব স্টেশন হয়ে প্রতিদিন অন্তত ১১টির অধিক আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।